ঢাকা-দিল্লি তিস্তা পানিবণ্টন চুক্তির সম্ভাবনা কমে যাচ্ছে

ঢাকা-দিল্লি তিস্তা পানিবণ্টন চুক্তির সম্ভাবনা কমে যাচ্ছে

এসএএম স্টাফ,
শেয়ার করুন

অভিন্ন নদীগুলোর পানিবণ্টন নিয়ে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের মধ্যে বিরোধ তীব্র হয়ে ওঠায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন সফরকালে দু’দেশের মধ্যে তিস্তা নদীর পানিবণ্টন নিয়ে কোন চুক্তি স্বাক্ষর নাও হতে পারে। তিস্তা ইস্যুতে কোনোরকম প্রতিশ্রুতি ছাড়াই বাংলাদেরশের পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক দু’দিনের ভারত সফর শেষে ১০ নবেম্বর দেশে ফিরেন। বরং, এই বিষয়টি বাদ দিয়ে অন্যান্য বিষয়ে এগিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে তাকে।

আগামী মাসে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লি সফরের কর্মসূচি চূড়ান্ত করার লক্ষ্যে পররাষ্ট্র সচিব দিল্লি সফর করেন। আগামী ৪ ও ৫ ডিসেম্বর শেখ হাসিনার সফর অনুষ্ঠিত হতে পারে বলে ইতোপূর্বে সংবাদ মাধ্যমে খবর প্রকাশিত হলেও এখন বলা হচ্ছে তা বিলম্বিত হতে পারে। গত বছর জুনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরের পর হাসিনার এ সফর অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
ঢাকায় প্রকাশিত খবর অনুসারে, তিস্তা ইস্যুতে ভারত এখন পর্যন্ত কোনো কথা বলতে রাজি না হওয়ায় শেখ হাসিনার দিল্লি সফর বিলম্বিত হতে পারে। শহীদুল হক ঢাকা ফিরে আলোচনার পর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন।
দিল্লিতে শহীদুল হক তার ভারতীয় প্রতিপক্ষ এস জয়শঙ্কর এবং পানিসম্পদ সচিব শশি শেখরের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন এবং তিস্তা চুক্তি স্বাক্ষরের ব্যাপারে বাংলাদেশের বিশেষ আগ্রহের কথা জানিয়ে দেন। কিন্তু দু’জনের কেউই এ ব্যাপারে বাংলাদেশকে নিশ্চয়তা দিতে পারেননি। ভারত বরং তারা অববাহিকাভিত্তিক পানি ব্যবস্থাপনায় তাদের আগ্রহের কথা জানিয়েছে।
তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে একটি সমাধানে পৌঁছতে বাংলাদেশের বারবার তাগাদা সত্ত্বেও ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির কারণে বিষয়টি দীর্ঘদিন ঝুলে আছে। ২০১১ সালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরের সময় এ চুক্তি স্বাক্ষরের উদ্যোগ নেয়া হয়। কিন্তু বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া ভারতের রাজ্য পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর আপত্তির কারণে উদ্যোগটি শেষ মুহূর্তে আটকে যায়।
গত অক্টোবরে গোয়ায় ব্রিকস আউটরিচ সম্মেলনের ফাঁকে মোদির সঙ্গে বৈঠকে বিষয়টি উত্থাপন করেন শেখ হাসিনা। তিস্তা ইস্যু দ্রুততার সঙ্গে নিষ্পত্তি করা হবে বলে তখন দিল্লির পক্ষ থেকে তখন ঢাকাকে আশ^স্ত করা হয়।
তবে, অভিন্ন নদীগুলোর পানিবণ্টন ইস্যুতে ভরতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি ইতোমধ্যে অনেক বেশি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। সর্বশেষ দিল্লি সুপ্রিম কোর্টের এক রায়ের পর পাঞ্জাব ও হরিয়ানার মধ্যে বিরোধ এখন তুঙ্গে। ওই রায়ে বলা হয় বিরোধপূর্ণ সুলতেজ ইয়ামুনা সংযোগ খাল দিয়ে পাঞ্জাব থেকে পানি নিয়ে যেতে পারবে হরিয়ানা। এ রায়ের পর পাঞ্জাবের রাজনীতিকরা এ রাজ্য থেকে কাউকে ‘এক ফোটা পানি’ নিয়ে যেতে দেবেন না বলে ঘোষণা দিয়েছেন।
‘পাঞ্জাবের কোন নদী থেকে একফোটা পানিও রাজ্যের বাইরে নিয়ে যেতে দেব না বলে আমরা সবাই মিলে প্রস্তাব পাস করেছি’, বলেছেন রাজ্যের উপ-মুখ্যমন্ত্রী সুখবীর বাদল, দি হিন্দু পত্রিকা ১১ নবেম্বর এ খবর প্রকাশ করে।
এদিকে, কিষেন গঙ্গা ও রাতলি পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণকে ঘিরে সিন্দু নদীর পানি নিয়ে কোনোরকম সালিশি ব্যবস্থা মেনে নেবে না বলে ভারত ঘোষণা দেয়ার পর পাকিস্তানের সঙ্গে নতুন বিরোধের আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিশ^ব্যাংকের মধ্যস্থতায় ১৯৬০ সালে দু’দেশের মধ্যে ‘সিন্ধু নদীর পানিবণ্টন চুক্তি’ স্বাক্ষর হয়।
১১ নবেম্বর হিন্দুস্তান টাইমস এক রিপোর্টে লিখে, প্রকল্পগুলো নিয়ে দু’দেশের মধ্যে কারিগরি মতপার্থক্য খতিয়ে দেখতে নিরপেক্ষ বিশেষজ্ঞ নিয়োগের প্রস্তাব দেয় ভারত। অন্যদিকে পাকিস্তান প্রস্তাব দেয় সালিশি আদালত স্থাপনের।
বিশ^ব্যাংক দু’টি প্রস্তাব একই সঙ্গে এগিয়ে নিতে চাইলে ভারত আপত্তি তোলে। আপত্তিতে বলা হয়, বিশ^ব্যাংকের উদ্যোগ চুক্তির ধারার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। পানিবণ্টন নিয়ে দু’দেশের মধ্যে বিরোধ দেখা দিলে বিশ^ব্যাংকে মধ্যস্থতা করার কথা বলা হয়েছে।
এ পরিপ্রেক্ষিতে, এ মুহূর্তে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে নদীর পানি বণ্টন নিয়ে কোন চুক্তি স্বাক্ষর খুবই কঠিন, এটা সুস্পষ্ট। মোদির ঢাকার সফরের সময়ও বাংলাদেশ এ বিষয়ে একটি ইতিবাচক ফল আশা করেছিলো, যা মূলত নিরাশায় পরিণত হয়। তখন বাংলাদেশ তার দু’টি বন্দর চট্টগ্রাম ও মংলা ব্যবহারের অনুমতি দিয়ে ভারতের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করে। এছাড়াও দু’দেশের মধ্যে উপকূলীয় জাহাজ চলাচলসহ বিভিন্ন বিষয়ে অনেকগুলো চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সাক্ষর হয়।
মোদির ওই সফরকে ভারতীয় নেতাদের মধ্যে এ যাবৎকালের সবচেয়ে সফল সফর হিসেবে বর্ণনা করে দিল্লি। তাই, হাসিনার সফরকেও সফল হিসেবে দেখতে আগ্রহী বাংলাদেশ।

শেয়ার করুন