দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনীতির চেহারা পাল্টে দিতে পারে জলবিদ্যুৎ

দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনীতির চেহারা পাল্টে দিতে পারে জলবিদ্যুৎ

এসএএম স্টাফ,
শেয়ার করুন

ভুটান ও নেপাল এই দুই ‘স্বল্পোন্নত দেশ জলবিদ্যুৎ শক্তির মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনীতির চেহারা পাল্টে দিতে পারে। উভয় দেশই ২০১৬ সালে জাতিসংঘের তৈরি স্বল্পোন্নত দেশগুলোর (এলডিসি) তালিকাভুক্ত এবং ২০২৫ সালের মধ্যে এই তালিকা থেকে বের হয়ে আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই অগ্রগতির ক্ষেত্রে অন্যতম প্রধান নির্ণায়ক হতে যাচ্ছে জলবিদ্যুৎ।
ভুটান ইতিমধ্যেই ভারতে জলবিদ্যুৎ রপ্তানিকারক গুরুত্বপূর্ণ দেশ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছে। ১৯৯৭ থেকে ২০০২ সালের মধ্যে দেশটির মোট জাতীয় আয়ের ৪৫ শতাংশ এসেছে ভারতে বিদ্যুৎ বিক্রয় করে। যার ফলে ভুটানের জনগণের জন্য ভালো মানের জীবনযাত্রা, মৌলিক পরিষেবাগুলি ভালোভাবে পাওয়ায় সুযোগ, উন্নত স্বাস্থ্য এবং শিক্ষা ব্যবস্থা এবং সর্বোপরি শিল্প ও বাণিজ্যিক উন্নয়ন নিশ্চিত করা সম্ভব হয়েছে। সার্বিক জীবনযাত্রার এই উন্নয়ন ভবিষ্যতে আরও বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করা হয়েছে আঙ্কটাডের এক প্রতিবেদনে।
প্রতিবেদন অনুসারে জলবিদ্যুৎ এখন ভুটানের অর্থনীতির মেরুদন্ডে পরিণত হয়েছে। বিদ্যুৎ বিক্রির সুবাদে ভুটানের মাথাপিছু জিডিপি দক্ষিণ এশিয়ায় এখন সর্বোচ্চ। এটি ২০১৫ সালে ২ হাজার ৫৮০ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়, যা বিশ্বের গড় মাথা পিছু জিডিপির ২০ শতাংশের সমান। ২০০৬ সালে ভুটানের জিডিপি ছিল ১ হাজার ৬১৫ মার্কিন ডলার। ২০১৬ সালে ভুটানে বার্ষিক জিডিপি’র প্রবৃদ্ধির হার ২০১৩ সালের ৩.৬ শতাংশে থেকে বেড়ে ৬.৪ শতাংশ হবে বলে প্রাক্কলন করা হয়েছে। শিল্প এবং সেবা খাতের দ্রুত বৃদ্ধি ছাড়া এই অর্জন সম্ভব হতো না। আর এটি অনেকটাই সম্ভব হয়েছে বিদ্যুতের সহজলভ্যতার কারণে। বর্তমানে ভুটানই হলো দক্ষিণ এশিয়ার প্রধান দেশ যে তার জাতীয় প্রয়োজনের তুলনায় বেশি বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে।
ভুটানের প্রতিবেশি নেপালও যদি তার প্রতিবেশী বড় দেশ ভারতের সাথে অনুরূপ প্রকল্প শুরু করতে পারে তবে তা থেকে অনেক বেশি উপকার পেতে পারে। তবে এ জন্য দু’দেশের মধ্যে অনেক বছর ধরে গড়ে ওঠা অবিশ্বাসকে দূর করতে হবে। এ দু’দেশের মধ্যে তাদের চলমান সীমান্ত উত্তেজনার কারণে অবিশ্বাস দূর করা বিশেষভাবে কঠিন হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

আঙ্কটাডের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, নেপাল তার জলবিদ্যুৎ সম্ভাবনার মাত্র ২ শতাংশের ব্যবহার করতে পারছে। যদি আগামী কয়েক দশক ধরে টেকসইভাবে এই সম্ভাবনার বিকাশ করা যায় তাহলে দেশটি অর্থনীতিতে বিপ্লব ঘটাতে পারবে। নেপাল তার উৎপাদিত বিদ্যুৎ প্রতিবেশী ভারত ও বাংলাদেশ দুই দেশকে বিক্রি করতে পারে। এই দুই দেশে বিদ্যুতের ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে।


নেপালের ২০১৫ সালের মাথাপিছু আয় বিবেচনায় তাদের এই সুযোগকে কাজে লাগানো উচিত। ২০১৫ সালে দেশটির জিডিপি ছিল ৬৮৯ মার্কিন ডলার যা বিশ্বের জিডিপি গড়ের মাত্র ৫ শতাংশের সমান। আঞ্চলিক সহযোগিতার উদ্দেশ্যে বিবিআইএন (বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত ও নেপালের জন্য) নামে দক্ষিণ এশিয়ার উপ আঞ্চলিক সহযোগিতার একটি উদ্যোগ চালু করা হয়েছে ইতিমধ্যে। বিবিআইএন মূলত কাজ করবে ভারতের সঙ্গে বিদ্যুৎ ও যোগাযোগ সংযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে। বিবিআইএন দেশসমূহের মধ্যে বর্তমান আলোচনা এই অঞ্চলের সার্বিক উন্নয়নে আশাব্যঞ্জক ভূমিকা রাখতে পারে। এর বাইরে চীনকে সংযুক্ত করে বিসিআইএম অর্থনৈতিক করিডোর নামে একটি আঞ্চলিক সহযোগিতার ফোরাম রয়েছে। সব ধরনের আঞ্চলিক উদ্যোগকে সমন্বয় করা গেলে এই অঞ্চলের দেশসমূহের মধ্যে অবিশ্বাস যেমন দূর হবে তেমনিভাবে অর্থনৈতিক উন্নয়নও নিশ্চিত করা যাবে।
এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, এই অঞ্চলে বেশ কিছু প্রকল্প ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে। এর মধ্যে আন্ত:সীমান্ত বিদ্যুৎ ট্রান্সমিশন ও আন্ত:সংযোগ পরিকল্পনা চলমান আছে। এছাড়া ভারত-নেপাল ১০০০ মেগাওয়াট ইন্টারকানেকশনের কাজও ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে যার মাধ্যমে ভারত ১৩২ কিলোভল্টে ৮০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করছে নেপাল থেকে। দুই দেশের মধ্যে আরও কয়েকটি ট্রান্সমিশন লিঙ্কের পাশাপাশি বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যেও একই ধরনের প্রকল্প পরিকল্পনাধীন আছে।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বের হয়ে আসার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায় হলো একে অপরের সাথে সহযোগিতার বন্ধন তৈরি করা। এই অঞ্চলে সাব-সাহারা আফ্রিকার তুলনায় আরো বেশী দরিদ্র মানুষের বসবাস রয়েছে। আঞ্চলিক সহযোগিতা দিয়ে এখানকার অর্থনৈতিক অবস্থার আমূল পরিবর্তন হতে পারে যা লক্ষ লক্ষ মানুষকে দরিদ্রতা থেকেও মুক্তি দিতে পারবে।

শেয়ার করুন